Dalit Samhati

ঝুমন দাসের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি : সন্তান কোলে নিয়ে রাজপথে স্ত্রী

সংহতি ডেস্ক:

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৫ মাস ২৪ দিন ধরে কারাগারে থাকা শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের বাসিন্দা ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি রানী দাস বলেছেন, ‘শুধু জামিন নয়, আমার স্বামীর নিঃশর্ত মুক্তি চাই।’ গতকাল শুক্রবার ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ কর্মসূচিতে এ দাবি করেন তিনি। সুইটি আরো বলেন, যারা হামলা-লুটপাট করেছে তাদের জামিন হয়ে গেছে। অথচ আমার স্বামীর এখনো জামিন হচ্ছে না। আমরা বারবার জামিন আবেদন করছি। গত দুই দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। আমার স্বামীর মুক্তির দাবিতে শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়েছি। সেখানে আমার দাবিগুলো তুলে ধরেছি।

সুইটি বলেন, আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি আমার স্বামী। আজকে বিনা অপরাধে প্রায় ৬ মাস জেলে আটক আছেন। আমি ও আমার পরিবার এখন চরম আর্থিক ও সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। ১ বছরের বাচ্চাকে নিয়ে তার বাবার মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে আমাকে।

ঝুমন দাসের স্ত্রী জানান, গত দুই দিন সমাবেশ শেষ করে গতকাল রাতের বাসে তিনি সুনামগঞ্জের দিরাই ফিরবেন। পরে সেখান থেকে শাল্লা হয়ে গ্রামের বাড়িতে যাবেন।

ঝুমন দাসের মা নিবা রানী দাস জানান, তার পুত্রবধূ সুইটি গত ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা এসেছেন। এখানে ঝুমনের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচিতে অংশ নিতেই এসেছেন। নিবা রানী দাস বলেন, আমার ছেলের মুক্তির দাবিতে কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমার ছেলেকে কবে কাছে পাব সে অপেক্ষায় আছি।

এদিকে ঝুমন দাসের মুক্তির দাবিতে সারাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। গত বুধবার এই কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। একই দিনে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকাতেও প্রতিবাদ সমাবেশ করে তারা। সেখানে ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি রানী দাস অংশ নেন।

ঝুমন দাসের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে উল্লেখ্য করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, আমরা জানি ঝুমন দাসকে কি অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে মামুনুল হককে ভণ্ড, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী উল্লেখ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল। এজন্য তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখা হয়েছে। এদিকে যারা পুরো গ্রামে হামলা ও লুটপাট করল তাদের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য মামলা করেছে পুলিশ। জামিনও হচ্ছে। অথচ কোনো অপরাধ না করেও ঝুমন দাসকে কালো আইন দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। যা রাষ্ট্র ও সংবিধানবিরোধী। তাই আমরা ঝুমন দাসের নিঃশর্ত মুক্তিসহ এ আইনে হওয়া সব মামলা প্রত্যাহার এবং আইনটি বাতিলের দাবি জানাই।

বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খাঁন আসাদুজ্জামান মাসুম বলেন, আমরা আজকে ‘নিপীড়নবিরোধী শাহবাগ’ ব্যানারে ঝুমন দাসকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটকে রাখার প্রতিবাদে দাঁড়িয়েছি। সেখানে ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি রানী দাস তার এক বছরের বাচ্চাকে নিয়ে এসেছিলেন। আমরা মনে করি এই আইন মানুষের মৌলিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করছে। যার উদাহরণ আমরা অনেক দেখেছি। ঝুমন দাস কোনো অপরাধ না করেও পাঁচ মাসের বেশি জেলে আটকে আছে। এজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, এ আইনে সব মামলা প্রত্যাহারসহ ঝুমন দাসের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে শানে রিসালাত সম্মেলন নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বক্তব্য দেন। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আগে থেকেই সমালোচনায় ছিলেন মামুনুল হক। দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। এ অবস্থায় দিরাইয়ের সমাবেশে এসে সরকারবিরোধী বক্তব্য দেন তিনি।

এই সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের যুবক ঝুমন দাস আপন। স্ট্যাটাসে তিনি মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক ‍সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন। মামুনুলের সমালোচনাকে ইসলামের সমালোচনা বলে এলাকায় প্রচার চালাতে থাকে তার অনুসারীরা। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

এরপর রাতেই স্থানীয় বাজারে হেফাজতে ইসলামসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে প্রশাসন। এ সময় ঝুমনকে আটকের খবর জানিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়। প্রশাসনের আহ্বানে তখন শান্ত থাকার আশ্বাস দেন উপস্থিত সবাই।

১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর দিন সকালে কয়েক হাজার লোক লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল করে হামলা চালায় নোয়াগাঁও গ্রামে। তারা ভাঙচুর ও লুটপাট করে ঝুমন দাসের বাড়িসহ হাওরপাড়ের হিন্দু গ্রামটির প্রায় ৯০টি বাড়ি, মন্দির।

১৬ মার্চ আটকের পর ১৭ মার্চ ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঝুমনকে আদালতে পাঠায় শাল্লা থানা পুলিশ। এরপর ২২ মার্চ ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম।

সূত্র: ভোরের কাগজ

সর্বশেষ