সংহতি ডেস্ক: খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের শিয়ালী গ্রামে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা দফায় দফায় তান্ডব চালিয়ে বেশ কয়েকটি মন্দির ও প্রতিমা এবং বাড়ি ভাংচুর করেছে। এ সময় তারা লুটপাট করে নিয়ে গেছে ১০/১২টি দোকান ও ঘরবাড়ীর মালামাল। শনিবার (৭আগস্ট) বিকেলে কয়েক ঘন্টা ধরে চলাকালীন এই তান্ডবের সময় লাঞ্ছিত হয়েছে অনেক নারী-পুরুষ। এসময় সন্ত্রাসীরা রামদা, চাপাতি, লাঠি সোটাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নারকীয় হামলা চালানোর পর আবারও হামলার ভয়ে পালিয়ে গেছে গ্রামের হিন্দুরা।
স্থানীয়রা জানান, দুস্কৃতকারীদের দুই দফার তান্ডবে শিয়ালী বাজার সংলগ্ন শ্মাশান মন্দির, মন্দিরের বিগ্রহ, গ্রামের পুর্বপাড়ার গোবিন্দ মন্দির, কালি মন্দির, দুর্গা মন্দির, একই এলাকার শিব ধরের গোবিন্দ মন্দিরসহ ৪/৫টি মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুর করে। এছাড়াও নিপুল ধরের বাড়ি, শিব ধরের বাড়ি, পনেশ মল্লিকের ঔষধের দোকান, নারায়ণ, অনিমেশ হিরা ও নিতুল বাড়ই-এর বাড়িসহ ৮ থেকে ১০টি বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বাধা দিতে গেলে দুস্কৃতকারীদের হামলায় আহত হয় কয়েকজন মহিলা-পুরুষ।
এলাকাবাসী হিন্দুদের অভিযোগ, শুক্রবার সন্ধ্যায় সনাতন ধর্মালম্বীরা সন্ধ্যারতি করার জন্যে হরিনাম সংকীর্তন করতে করতে শিয়ালী বাজার সংলগ্ন শ্মশান মন্দিরের দিকে যেতে থাকে। এ সময়ে শিয়ালী দাইপাড়া সংলগ্ন জামে মসজিদের কাছে এলে কয়েকজন যুবক তাদের নাম সংকীর্তন করতে নিষেধ করে। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে বসচা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মালম্বীদের পক্ষ থেকে রূপসা থানায় একটি অভিযোগ করা হয়। এরই মধ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সংঘবদ্ধ হয়ে প্রথমে শ্মশান মান্দির ও বিগ্রহ ভাংচুর করে। পরবর্তীতে এলাকার মানুষের বাধার মুখে কিছু পিছু হটে। পরে আরও সংঘবদ্ধ হয়ে শিয়ালী গ্রামের পার্শবর্তী চাঁদপুর, বামন ডাঙ্গা, গাংনী, নরনীয়াসহ কয়েক গ্রামের বিপুল সংখ্যক লোক দেশিয় বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালিয়ে এই ভাংচুর ও লুটপাট করে।
স্থানীয়রা বলছেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার বিকেলে কয়েকশ সন্ত্রাসী লাঠিসোটা, রামদা, চাপাতিসহ দেশিয় অস্ত্রসন্ত্র নিয়ে শিয়ালী বাজার সংলগ্ন শ্মশান মন্দির ভাংচুর করে। মন্দিরের মূর্তিগুলোও ভাংচুর করা হয়। স্থানীয়রা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেও সন্ত্রাসীদের তান্ডবে এক পর্যায়ে ভয়ে মন্দিরের লোকজন পালিয়ে যায়। তবে দ্রুত মন্দির ভাংচুরের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী এসে প্রতিরোধ করলে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনার পর থেকে শিয়ালী, গোয়ারা, ডোবা, ঘাটভোগসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
শিয়ালী গ্রামের বাসিন্দা শিব ধর জানান, দুস্কৃতকারিরা তার বাড়ির গোবিন্দ মন্দিরও ভাংচুর করেছে। এ সময়ে বাড়িতে লুটপাটও করে। তার বাড়ি ছাড়াও গ্রামের বেশ কয়েকটি মন্দির ও বাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে।
একই গ্রামের শিপন ধর জানান, সন্ত্রাসীরা নির্মল ধরের সমাধিস্থল, বসত বাড়ি, মন্দির ভাংচুর করেছে। জীবন বাচাতে এ সময়ে সবাই ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। আবারো হামলা হতে পারে এই ভয়ে গ্রামের মানুষ আতংকিত হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রূপসা উপজেলা পুজা পরিষদের সভাপতি শক্তিপদ বসু জানান, হরিনাম সংকীর্তনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মৌলবাদী দুস্কৃতকারীরা শুক্রবার সনাতন ধর্মালম্বী কয়েকজনকে লাঞ্ছিত করে। এই ঘটনা রূপসা থানাকে জানানো হয়েছিল। তবে পুলিশ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় শনিবার সংঘবদ্ধ হয়ে মৌলবাদী দুস্কৃতকারীরা দুই দফায় হামলা চালায়। এ সময়ে স্থানীয় ক্যাম্পের পুলিশও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। তারা ৪টি মন্দিরসহ প্রতিমা এবং ১০টি বাড়ীতে ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। তাদের হামলায় ১০/১২জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছে। মৌলবাদীরা আবারও হামলা চালাতে পারে আশংকায় অনেকেই ঘরবাড়ী ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
তবে রূপসা উপজেলার নির্বাহী অফিসার জানান, ওই দ্বন্দ্বের সমাধান সেদিনই হয়ে গিয়েছিল এবং ঐদিনের ঘটনার সাথে শনিবারের হামলার সম্পর্ক নেই।
ইউএনও রুবাইয়া তাছনিম জানান, শুক্রবারের ঘটনার পরপরই প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তাদের নিয়ে স্থানীয় হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।
খুলনার পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুব হাসান জানান, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। স্থানীয় ভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান